স্বদেশ ডেস্ক:
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত দলের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণশুনানিতে ওই রাতে এপিবিএন চেকপোস্টে সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গণশুনানি উপলক্ষে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রবিবার সকালে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের পাশে বাহারছড়া শামলাপুর ২৩ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিআইসির কার্যালয়ে এই কার্যক্রম গণশুনানি শুরু হয়। সেখানে সকাল থেকেই শত শত লোক এসে জড়ো হয়। সকাল সাড়ে ১১ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১১ জন শুনানিতে সাক্ষী হিসেবে নাম লেখান। সেখান থেকে ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে তদন্ত কমিটি। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা ধরে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সাক্ষ্যগ্রহণ করে তদন্ত কমিটি।
গণশুনানি শেষে তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার জন্য গত ৩ আগস্ট থেকে কাজ
শুরু করি। যেখানে যাওয়া দরকার সেখানে গিয়েছি। ঘটনাস্থলসহ প্রত্যেকটি জায়গায় তিনবার করে পরিদর্শন করেছি। তদন্তের সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা একটি মানচিত্র তৈরি করেছি। পাশাপাশি এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা ছিল টেকনাফ থানা পুলিশ, বাহারছড়া তদন্ত
কেন্দ্রের পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, প্রত্যক্ষদর্শী এবং এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব গাড়ির চালক, সুরতহাল তৈরিকারী কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬০ জনের সঙ্গে কথা বলেছি। এরপরও কোনো কিছু যেন বাদ না পড়ে সে বিষয় নিয়ে ঘটনাস্থলের পাশে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। এই গণশুনানিতে ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শীর কথা শুনেছি। এর মধ্যে যারা দেখেছে এ রকম ৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা তদন্তের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। আমরা আশা করছি সরকার আমাদের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত যে সময় দিয়েছে এর মধ্যে আমাদের রিপোর্ট প্রস্তুত করে সরকারের কাছে জমা দিতে পারব। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের কাছ থেকে চমৎকার সহযোগিতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে রিপোর্টে সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি।
এ দিকে সকাল থেকে গণশুনানির খবর পেয়ে শত শত স্থানীয় লোকজন জড়ো হয় সেখান থেকে সাবেক ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের কাছে হয়রানির শিকার হওয়া বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের কাছে তাদের অপকর্মের চিত্র তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গত গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে র্যাবকে। ইতোমধ্যে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।